গাজা যুদ্ধের আপডেট;
গাজা যুদ্ধের মধ্যে ভারত ইসরাইলকে গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করছে।
আট মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। এই আগ্রাসনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। এবার ইসরাইলকে গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করছে ভারত।
গত বছরের ৭ অক্টোবর সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরাইল। এরপর গত আট মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। গুরুতর আহত হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি।
ইসরাইলের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি পশ্চিমা দেশগুলো টনকে টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠাচ্ছে। আর সেসব অস্ত্র দিয়ে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ভারত ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা পালন করার কথা বললেও সম্প্রতি দেশটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জোর বিতর্ক তৈরি হয়।
**আরও পড়ুন: মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর ভাষণ ঠেকাতে ছয় ইসরাইলির চিঠি**
গত মাসের মাঝামাঝি স্পেন সরকার জানায়, গাজায় মুহুর্মুহু হামলা চালানো ইসরাইলকেই টন টন অস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, ভারত থেকে অস্ত্র বহনকারী একটি জাহাজও স্পেনের উপকূলে আটকে দেয়া হয়।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বুয়েনো সে সময় বলেন, ‘আমরা এই প্রথম কোনও বিদেশি জাহাজকে ‘না’ বলেছি। কারণ এই জাহাজে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আরও জানতে পেরেছি যে অস্ত্রগুলি ইজ়রায়েলে পাঠানো হচ্ছে।’
বুয়েনো আরও জানান, গত ২১ মে জাহাজটি স্পেনের বন্দরে নোঙর করার অনুমতি চেয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে অন্য যেকোনো দেশের যেকোনো জাহাজকে একই কারণে আটকাবে স্পেন। এটাই আমাদের নীতি। কারণ পশ্চিম এশিয়া শান্তি চায়, আর অস্ত্র চায় না।’
এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। তদন্তে ঘটনার সত্যতা উঠে এসেছে বলে বুধবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটি। প্রতিবেদন মতে, গত ১৫ মে খুব সকালে ‘বোরকুম’ নামে পণ্যবাহী একটি জাহাজ স্পেনের উপকূলে এসে দাঁড়ায়।
**আরও পড়ুন: ইসরাইলি বর্বরতায় গাজায় প্রতিদিন পঙ্গু হচ্ছে ১০ শিশু!**
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের সর্বশেষ খবর
জায়গাটি ছিল স্পেনের কার্টাগেনা বন্দরের কাছেই। তবে বিষয়টি টের পেয়ে সেখানে জড়ো হন অসংখ্য বিক্ষোভকারী। ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে সেসব বিক্ষোভকারী জাহাজটি তল্লাশির দাবি জানান। তাদের সন্দেহ, জাহাজটিতে অস্ত্র রয়েছে এবং তা ইসরাইলে যাচ্ছে।
ঠিক সেই সময়ই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কয়েকজন বামপন্থি সদস্য স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সানচেজের কাছে একটি চিঠি লেখেন। জাহাজটিকে যেন বন্দরে ভিড়তে না দেয়া হয় চিঠিতে সেই আবেদন জানান তারা।
৯ সংসদ সদস্য স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ইসরাইলগামী অস্ত্র বোঝাই একটি জাহাজকে অনুমতি দেয়ার মানে হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য বর্তমানে তদন্তাধীন একটি দেশে অস্ত্র পরিবহনের অনুমতি দেয়া।’
ওই চিঠির পর স্পেনের সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগেই জাহাজটি স্পেনের বন্দরে তার নোঙর পরিকল্পনা বাতিল করে এবং স্লোভেনিয়ার বন্দর কোপারের দিকে অগ্রসর হয়।
জাহাজটি স্পেনের বন্দর ছাড়ার পর দেশটির কট্টর বামপন্থি সুমার পার্টির রাজনীতিক ইনিগো ইরেজন এক এক্স বার্তায় বলেন, আমাদের ধারণাই সঠিঠিক ছিল। জাহাজটি অস্ত্র পরিবহণ করছিল।
**আরও পড়ুন: গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যে সতর্কবার্তা দিলো তুরস্ক**
আল জাজিরা বলছে, তাদের হাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি এসেছে। সেই নথি অনুসারে জাহাজটিতে যে বিস্ফোরক ছিল তা ভারতে বোঝাই করা হয়েছিল এবং এটি ইসরাইলের আশদোদ বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। আশদোদ বন্দরটি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সমুদ্রে জাহাজের গতিবিধি নিরীক্ষণ করে এমন সাইটগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি ২ এপ্রিল দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের চেন্নাই থেকে যাত্রা শুরু করে এবং ইয়েমেনের হুতিদের হামলার ভয়ে লোহিত সাগরের ট্রানজিট এড়িয়ে আফ্রিকা উপকূল দিয়ে ঘুরে যায়।
ফিলিস্তিনে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশকারী সংস্থা আরইএসসিওপি জানিয়েছে, শনাক্তকরণ কোডগুলো থেকে বোঝা যায়, জাহাজটিতে ২০ টন রকেট ইঞ্জিন, বিস্ফোরক চার্জসহ ১২ দশমিক ৫ টন রকেট, এক হাজার ৫০০ কেজি বিস্ফোরক উপাদান এবং কামানের জন্য ৭৪০ কেজি চার্জ ও প্রোপেল্যান্ট ছিল।
সমালোচনা ও হামলা থেকে বাঁচতে জাহাজের কর্মীদের বলা দেয়া হয়েছিল, তারা যেন কোনোভাবেই ইসরাইল ও ইসরাইলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র উৎপাদনকারী সংস্থা আইএমআইয়ের নাম উচ্চারণ না করেন।
জাহাজটির মালিক জার্মানির এমএলবির এক কর্মকর্তা জাহাজে অস্ত্র ও বিস্ফোরক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমএলবি ম্যানফ্রেড লাউটারজং বেফ্রাচতুং আল জাজিরাকে বলেছে, ‘জাহাজটির গন্তব্য ইসরাইল ছিল না এবং এতে অস্ত্র বা অন্য কোনো পণ্য লোড করা হয়নি।’
**আরও পড়ুন: জাতিসংঘের মহাসচিবের বিরুদ্ধেও গুজব ছড়াচ্ছে ইসরাইল!**
ভারত থেকে ছেড়ে আসা আরেকটি কার্গো জাহাজ গত ২১ মে কার্টাগেনা বন্দরে প্রবেশ করতে চাইলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইস জানায়, মারিয়েন ড্যানিকা নামের জাহাজটি ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে রওনা হয়েছিল এবং ২৭ টন বিস্ফোরক নিয়ে ইসরাইলের হাইফা বন্দরে যাচ্ছিল। গত বছর থেকে এই হাইফা বন্দর পরিচালনা করছে ভারতের আদানি গ্রুপ।
স্প্যানিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন যে, সামরিক পণ্য নিয়ে জাহাজটি ইসরাইলের দিকে যাওয়ার কারণে এটিকে নোঙ্গর করতে দেয়া হয়নি।
এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ইসরাইলকে গোপনে অস্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে ভারত। সামরিক পণ্য সরবরাহে ভারতের স্বচ্ছতার অভাবের কারণে এসব তথ্য গোপন থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর গবেষক জাইন হুসেন বলেন, ‘যাচাইযোগ্য তথ্যের অভাবের কারণে অস্ত্রের স্থানান্তর হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।’
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের আজকের খবর
**আরও পড়ুন: খাদ্য সংকটে বিপর্যয়ের মুখে গাজায় ৫ লাখ মানুষ**
তিনি বলেন, তবে ‘ভারত এবং ইসরাইলের মধ্যে সহযোগিতা বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে। তাই এটা আমাদের দেখা অসম্ভব নয় যে, ভারতের তৈরি উপাদান ইসরাইল গাজার যুদ্ধে ব্যবহার করছে।’
৬ জুন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। হামলার পর কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের ফেলা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্টাংশের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। অংশগুলোর মধ্যে একটি লেবেল স্পষ্টভাবে লেখা ছিল ‘মেড ইন ইন্ডিয়া।’
0 Comments